রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে প্রবাসীদের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেট। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণে উৎসাহিত করতে বেশি রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীদের ‘রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড’ দেয়ার সি'দ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ কনস্যুলেট। আগামী অক্টোবর মাসে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এ অ্যাওয়ার্ড দেয়া হবে। প্রবাসীদের মধ্যে অনুপ্রেরণা যোগাতেই এমন উদ্যোগ, বলছে কনস্যুলেট।
বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশ দূতাবাস নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এসব উদ্যোগের ধা'রাবাহিকতায় এবার পুরস্কার দেয়ার সি'দ্ধান্ত নেয়া হলো। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যারা শুধু বৈধপথে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রেরণকারী প্রবাসীরা ‘রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড’ এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। পাঁচটি আলাদা ক্যাটাগরির মধ্যে মাসিক ১২’শ দিরহা'ম বেতনের সমপরিমাণ ও এর নিচে সাধারণকর্মীদের থেকে ১০ জন, ১২’শ দিরহা'মের উপরের সাধারণকর্মীদের ১০ জন, ব্যবসায়ী (পুরুষ) ১০ জন, ব্যবসায়ী (নারী) ৫ জন ও পেশাজীবীদের মধ্যে প্রকৌশলী, শিক্ষক, ব্যাংকার, কনসালটেন্ট, সাংবাদিক, ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে কর্মর'ত প্রবাসীদের থেকে ১০ জনকে এই পুরস্কার প্রদান করা হবে।
.
বিজ্ঞ'প্তিতে বলা হয়, রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ডের জন্য কনস্যুলেট কর্তৃক সরবরাহকৃত নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করতে হবে। বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণের প্রমাণে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন দাখিল করতে হবে।
দুবাইয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল, শারজাহ ও ফুজাইরাতে বাংলাদেশ সমিতি, রাস আল খাইমা'হতে বাংলাদেশ ইংলিশ প্রাইভেট স্কুলে সরাসরি অথবা [email protected] ই-মেইল ঠিকানায় আবেদন দাখিল করা যাব'ে। নির্দিষ্ট সময়ের পর কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কনস্যুলেট দুবাইয়ের কনসাল জেনারেল বি এম জামাল হোসেন বলেন, সর্বমোট ৪৫ ব্যক্তিকে এই পুরস্কারের আওতায় আনা হচ্ছে। এর মধ্যে সাধারণ কর্মী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী থাকবেন। বাংলাদেশ কনস্যুলেটের এ ঘোষণায় এরইমধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে বেশ উৎসাহ দেখা গেছে। রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ডের জন্য এখন পর্যন্ত শতাধিক আবেদনপত্র জমা পড়েছে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই সংখ্যা কয়েক হাজারে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সি''ঙ্গাপুর থেকে বিনিয়োগ আসবে বাংলাদেশে, বাড়বে রফতানি। বাংলাদেশের স''ঙ্গে সি''ঙ্গাপুরের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃ'দ্ধির লক্ষ্যে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প বি'ষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে আম'দানি-রফতানি বাণিজ্য-প্রক্রিয়া মসৃণ করতে সি''ঙ্গাপুরকে মডেল হিসেবে গু'রুত্ব দিচ্ছে সরকার।
সমুদ্র, স্থল ও বিমানবন্দরের মাধ্যমে আম'দানি-রফতানির সময়কাল, নথিপত্র এসব বি'ষয়ে সি''ঙ্গাপুরকে ভিত্তি ধরে ব্যবসা সহজ করার সূচক এগিয়ে নেয়া হবে। এ ছাড়া দেশটিতে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষিজাত পণ্য, ওষুধ এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য রফতানি বৃ'দ্ধির বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জানা গেছে, বিনিয়োগে ওয়ানস্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করাসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করায় সি''ঙ্গাপুরের পছন্দের তালিকায় প্রথম'দিকে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। সম্প্রতি দেশটির বিজনেস ফেডারেশনের ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে গেছেন।
ওই সময় প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল পরিদর্শন, শীর্ষ ব্যবসায়ী ও সরকারের বিভিন্ন বিভাগের স''ঙ্গে মতবিনিময় করে। বর্তমানে বাংলাদেশ সি''ঙ্গাপুরের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৫ থেকে ৬ বিলিয়ন ডলার। বাণিজ্য ঘাটতি সি''ঙ্গাপুরের অনুকূলে রয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ভারত ও চীনের পর সি''ঙ্গাপুরও বাংলাদেশের জন্য গু'রুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের ১৫০টি কোম্পানি সি''ঙ্গাপুরে কাজ করছে। এ ছাড়া জনশক্তি রফতানি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও সি''ঙ্গাপুর বাংলাদেশকে সহযোগিতা দিচ্ছে। এদিকে সি''ঙ্গাপুরের স''ঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ দ্রুত ও ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি পররাষ্ট্র সচিব বরাবর একটি চিঠি দেয়া হয়।
মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. ফিরোজ উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ-সি''ঙ্গাপুরের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃ'দ্ধির লক্ষ্যে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের স''ঙ্গে সি''ঙ্গাপুরের মিনিস্ট্রি অব ট্রে'ড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এর পারমানেন্ট সেক্রেটারি সভায় সি'দ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এতে বাংলাদেশ ও সি''ঙ্গাপুরের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃ'দ্ধির লক্ষ্যে এ সংশ্লিষ্ট খাতসমূহ চিহ্নিত করার জন্য বাংলাদেশের ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন ও ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তার তথ্যাদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সি''ঙ্গাপুরকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
অন্যদিকে এ বি'ষয়ে সি''ঙ্গাপুর কর্তৃক ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন ও ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা নির্বাচনের বি'ষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অবগত নয়। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ও সি''ঙ্গাপুরের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃ'দ্ধির লক্ষ্যে এ সংশ্লিষ্ট খাতসমূহ চিহ্নিত করার জন্য সি''ঙ্গাপুর কর্তৃক ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের বি'ষয় ও সে দেশের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তার হালনাগাদ তথ্যাদি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এ প্রস''ঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এফটিএ মো. হাফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ কারণে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃ'দ্ধিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স''ঙ্গে ফ্রি ট্রে'ড এগ্রিমেন্ট কিংবা প্রিফারেন্সিয়াল ট্রে'ড এগ্রিমেন্ট করার ওপর জোর দিচ্ছে সরকার।
এর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের স''ঙ্গে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন, যৌ'থ বাণিজ্য কমিশন ও বিভিন্ন নামের বাণিজ্য চুক্তি করা হবে। এরই ধা'রাবাহিকতায় সি''ঙ্গাপুরের স''ঙ্গে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সি''ঙ্গাপুর বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গু'রুত্বপূর্ণ।
বিশেষ করে অবকাঠামো খাত উন্নয়ন এবং দেশের বিভিন্ন শিল্প খাতে দেশটির বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। সি''ঙ্গাপুরের বিনিয়োগ আনা এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য উন্নয়নে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করার বি'ষয়টি জরুরি হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, দেশের বিপুল সংখ্যক জনশক্তি সি''ঙ্গাপুরে কাজ করছে। এ কারণে জনশক্তি রফতানি এবং রেমিটেন্স আহরণে সি''ঙ্গাপুর গু'রুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে সি''ঙ্গাপুরে স্বাস্থ্য ও অন্যান্য পরিষেবা খাতে দক্ষ কর্মী নিয়োগের জন্য অনুরোধ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।
সম্প্রতি সি''ঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণানের স''ঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ অনুরোধ করেন। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র অন্বেষণের প্রয়োজনীয়তার বি'ষয়ে একমত হয়েছেন। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ, নবায়নযোগ্য জ্বা'লানি, বিদ্যুৎ সঞ্চালন খাতে বিনিয়োগ করতে সি''ঙ্গাপুরের বিনিয়োগকারীদের আরও উৎসাহিত করার অনুরোধ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি জানান, সি''ঙ্গাপুর বাংলাদেশের একটি গু'রুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদার। বাংলাদেশ ও সি''ঙ্গাপুরের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) উদ্যোগ রয়েছে।
এফটিএ দ্রুত শেষ করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসা সহজ করতে সি''ঙ্গাপুরকে অনুসরণ করতে চায় বাংলাদেশ। বিশেষ করে আম'দানি-রফতানি বাণিজ্য প্রক্রিয়া মসৃণ করতে সি''ঙ্গাপুরকে মডেল মানছে বাংলাদেশ। সমুদ্র, স্থল ও বিমানবন্দরের মাধ্যমে আম'দানি-রফতানির সময়কাল, নথিপত্র এসব বি'ষয়ে সি''ঙ্গাপুরকে ভিত্তি ধরে ব্যবসা সহজ করার সূচকে নিজেদের এগিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
এসব কাজ করতে কয়েক মাস আগে সরকার ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন বি'ষয়ে একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটি কাস্টমস ও বন্দরের দক্ষতা বৃ'দ্ধির কিছু উপসূচকে সি''ঙ্গাপুরকে ভিত্তি করে বাংলাদেশের লক্ষ্য ঠিক করেছে।
সর্বাপেক্ষা উন্নত মুক্ত বাজার অর্থনীতির বিকাশ হচ্ছে দেশটিতে। হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও সি''ঙ্গাপুর-এ চারটি দেশ এশিয়ার অর্থনীতিতে বাঘ হিসেবে পরিচিত। তবে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দিক থেকে সি''ঙ্গাপুর বেশ এগিয়ে রয়েছে।
বিশ্বে মাথাপিছু আয়ের দিক দিয়ে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চস্থানীয়। মোট দেশজ উৎপাদনের হার ১৪.২ শতাংশ। এ কারণে দেশটির স''ঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃ'দ্ধি ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে।
এ প্রস''ঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের গু'রুত্বপূর্ণ ১০০টি স্থানে স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে তুলছেন। এদের মধ্যে অনেকগু'লোর কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। পৃথিবীর অনেক দেশ এরই মধ্যে এখানে বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে এসেছে।
সি''ঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং এনার্জি ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করতে পারে। এতে তারা লাভবান হবেন। এদিকে, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইও সি''ঙ্গাপুরের স''ঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে চায়। সম্প্রতি সংগঠনটির পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল সি''ঙ্গাপুর সফর করেছেন।
এর পাশাপাশি দেশেও যখন সি''ঙ্গাপুরের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল এসেছে তাদেরকেও গু'রুত্ব দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বি'ষয়ে পারস্পরিক মতবিনিময় সভা করেছে। এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, সি''ঙ্গাপুর একটি উন্নত রাষ্ট্র। জনশক্তি রফতানি করে দেশটি থেকে বিপুল পরিমাণ রেমিন্টেস আনা হচ্ছে। সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ