ঢাকায় বিমানবন্দরে যখন সোনার বার কিংবা অলংকার ধ’রা পড়ে তখন কমন একটি প্রশ্ন আমা'দের প্রবাসী ভাইরা করে থাকেন। কেউ কেউ প্রশ্নের পাশাপাশি অশ্লিল ভাষায় গালাগালও করেন। প্রথম প্রশ্ন, আমা'র টাকায় আমি সোনা কিনে আনছি, তোদের কি ? তোদের বাপের টাকায় তো কিনি নাই। তোরা এয়ারপোর্টে ধরবি ক্যান।
২য় প্রশ্ন, ''' আইছে, সৌদি/দুবাই বিমানবন্দরের স্ক্যানারে কেন ধ’রা পড়লো না? তাদের দেশের কাস্টমস কেন ধরলো না? বাংলাদেশের এয়ারপোর্টের ভিতরে ডুকার সাথে সাথে ধইরা ফালাস। বাংলাদেশের এয়ারপোর্টের চাইতে তো দুবাই/সৌদির এয়ারপোর্টের টয়লেট অনেক ভালো । বিশ্লেষণের আগে সাম্প্রতিক ৩টি ঘটনা জানাতে চাই।
ঘটনা-১ বাংলাদেশ থেকে একটি ছেলে তার খালাতো ভাইয়ের জন্য ৩০০ পিস ব্যাথার ওষুধ নিয়ে যায়। সৌদি বিমানব্দরে আট'ক হয় এবং ১ মাস জেল খেটেছে।
ঘটনা-২ যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া বিমানবন্দরে প্রবেশের সময় ধ’রা খেলো বাংলাদেশি দম্পতি। কারণ তাদের লাগেজে ছিলো, ৪৪ পাউন্ড গরুর মাংস, চাল, ফল, শাকসবজি, এবং বীজ । এসব বহনের কারণে তাদের বড় অংকের জরিমানাও করা হয়েছে। জব্দকৃত পণ্য ধ্বং'স করেছে মা'র্কিন কাস্টমস ও সীমা'ন্ত সুরক্ষা বাহিনী। বাংলাদেশি দম্পতি কোন দেশে থেকে এসব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন সেটা অবশ্য জানা যায়নি।
ঘটনা-৩ নেপালে ৭ জন বাংলাদেশি জেল খেটেছে, কারণ তাদের কাছে সোনার ২টি করে বার ছিলো। প্রথম কথা হচ্ছে, বিশ্বের সকল দেশের বিমানবন্দরগু'লোর প্রধান ও কমন গু'রুত্ব নিরাপত্তা নিয়ে। নিরাপত্তার বি'ষয়টি হচ্ছে, কোন যাত্রী পি'স্তল, গু'লি, ছু'রি অর্থ্যাৎ কোন অ'স্ত্র বহন করছে কিনা। কিংবা কোন বোমা বা বিস্ফোরক দ্রব্য বহন করছে কী না নিরাপত্তা ছাড়া অন্যান্য বি'ষয়ে দেশে দেশে নিয়ম ও প'দ্ধতি ভিন্ন।
নিজ নিজ দেশের পলিসি অনুযায়ী অন্যান্য বি'ষয়ে গু'রত্ব দেয়া হয়। আপনি আপনার টাকায় কিনেন আর উপহার পান যাই হোক না কেন, আপনি আপনার ইচ্ছে মতো যে কোন জিনিস যে কোন পরিমান বহন করে নিয়ে যেতে পারবেন না। অর্থনীতি, সামজিক, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন কারণে দেশে দেশে নি'ষি'দ্ধ কিংবা আম'দানিযোগ্য পণ্য ভিন্ন ভিন্ন রকমের।
ঘটনা-৩ দিয়ে শুরু করি। নেপালের কাস্টমস রুলস অনুযায়ী, একজন যাত্রী সোনার বার ৫০ গ্রামের বেশি আনতে পারবেন না। কিন্তু যে ৭ জন জেল খেটেছেন তাদের কাছে ২০০ গ্রাম সোনার বার ছিলো। অথচ বাংলাদেশের নিয়ম অনুযায়ী একজন যাত্রী ২০০ গ্রাম সোনার বার আনতে পারেন।
ঘটনা-২ এ যুক্তরাষ্ট্রের দেশের বাইরে থেকে কোনও প্রাণী, রান্না করা মাংস, খাবার, চাল-ডাল ইত্যাদি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষে'ধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু তারা যেদেশ থেকে গেছে সেদেশে হয়ত নিয়ে যাওয়া নিয়ে কোন বিধি নিষে'ধ নেই।
ঘটনা-১ এ যে ব্যাথার ওষুধ নিয়েছে সেটা বাংলাদেশে নি'ষি'দ্ধ নয়, ফলে বাংলাদেশ থেকে আট'কায়নি। কিন্তু সৌদিতে ওই ওসুধ নি'ষি'দ্ধ তাই আট'কে জে'লে নেয়া হয়েছে যাত্রীকে।
ভ্রমণের সময় অ'স্ত্র ও বিস্ফোরক ছাড়া অন্য কোন পণ্য/জিনিস রফতানি নি'ষি'দ্ধ না হলে কোন দেশ আট'কাবে না। যাত্রীকে নিজ দায়িত্বে জেনে নিতে হবে, আপনি যে দেশে নিয়ে যাচ্ছেন সে দেশে আম'দানীর অনুমতি আছে কী না, থাকলে কি পরিমান।
সোনার অলংকার ও বারের প্রস''ঙ্গে আসি। যাত্রী যে দেশে থেকে নিয়ে আসছেন, সে দেশ বিক্রি করছে, ফলে তাদের আয় হচ্ছে। যেহেতু নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট নয়, তাই আপনি যত খুশি নিবেন তারা আট'কাবে না।
কিন্তু আপনি যে দেশে নিয়ে যাব'েন, সেদেশ তার অর্থনীতি বিবেচনা করে আম'দানী ও পরিমানের বি'ষয়ে প'দ্ধতি ঠিক করবে। এখানে আরেকটি বি'ষয়ে আপনি যাত্রী হিসেবে যে অনুমতি পাবেন, সেটি নিয়ে ব্যবহারের জন্য নিজের পণ্য হিসেবে। ব্যবসার জন্য আনতে হলে আপনাকে আম'দানীর অনুমতি নিয়ে পৃথক প'দ্ধতি আনতে হবে।
বাংলাদেশে ১০০ গ্রাম সোনার অলংকার একজন যাত্রী স''ঙ্গে আনতে পারবেন, নিজের ব্যবহারের জন্য। কিন্তু কোন যাত্রী যদি এই অলংকার দোকানে বিক্রির উদ্দেশ্যে আনেন তাহলে তা অ’পরাধ এবং কাস্টম এই সোনা আট'ক করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে পারবে।
বাংলাদেশে একজন যাত্রী নিজের জন্য ২০০ গ্রাম পর্যন্ত সোনার বার শুল্ক দিয়ে দেশে আনতে পারবেন। কিন্তু ব্যবাসীয়ক উদ্দেশ্যে আপনি অন্যের সোনার বার বহন করে নিয়ে আসেন, শুল্ক দিলেও এটা অ’পরাধ।