সৌদি আরবের একটি আপিল আ'দালত মসজিদুল হারামের বিশিষ্ট ইমাম শায়খ সালেহ আল-তালিবকে ১০ বছরের কারা'দ'ণ্ড দিয়েছেন। তার বিরু'দ্ধে আনীত অ'ভিযোগ থেকে খালাস দেয়ার বিশেষ ফৌজদারি আ'দালতের সি'দ্ধান্তকে বাতিল করে এই রায় দেয়া হয়েছে। একটি মানবাধিকার সংস্থা তথ্যটি জানিয়েছে।
৪৮ বছর বয়সী শায়খ সালেহ আল-তালিব ২০১৮ সালের আগস্টে মসজিদুল হারামের ইমাম থাকাবস্থায় গ্রে'ফতার হয়েছিলেন। কিন্তু সে সময়ও তার গ্রে'ফতারের জন্য আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। তবে সেই সময় সৌদির ধ'র্মীয় ব্যক্তিত্বদের গ্রে'ফতারের ওপর নজরদারি করে- এমন একটি সংস্থা সোস্যাল মিডিয়া অ্যাডভোকেসি গ্রুপ প্রিজনারস অব কনসায়েন্স জানিয়েছিল, জনসমক্ষে মন্দের বিরু'দ্ধে কথা বলা এবং প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা সংক্রা'ন্ত খুতবা দেয়ার কারণে তাকে গ্রে'ফতার করা হয়েছিল।
শায়খ সালেহ তার প্রদত্ত খুতবায় প্রচন্ডরকমভাবে, অ’শ্লী'লতা ও ইসলামী শরীয়তে নি'ষি'দ্ধ বস্তুগু'লো থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব বলেন এবং যারা বেহায়াপনার প্রচার করছে তাদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করার আদেশ করেন, যদিও তিনি তার সব কথা অজ্ঞাত ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন কিন্তু যাদের বোঝার তারা বুঝে নিয়েছিলেন যে, তিনি মূলত এই কথাগু'লো কাকে সম্বোধন করে বলেছেন!
মসজিদুল হারামের মিম্বর থেকে দেয়া শায়খ সালেহ আল-তালিবের সেই খুতবার চুম্বাকাংশ তুলে ধ’রা হলো-
তিনি বলেন, মুনাফিকরা তাদের মঞ্চে বলে- তোমর'া কুরআনের মজলিসকে বর্জন করো। আমর'া আমা'দের মসজিদের মিম্বর থেকে স্পষ্ট ভাষায় তাদেরকে বলছি, হে মুসলমানরা, তোমর'া মুনাফিক ও বেঈমানদের অনুষ্ঠানকে বর্জন করো৷ তোমর'া আল্লাহর নাফরমান এবং যারা এই সমাজের মধ্যে অ’শ্লী'লতা ও বেহায়াপনাকে চালু করছে তাদেরকে বয়কট করো।
আমর'া ওই কথাই বলব যা আমা'দের পূর্বসূরী বড় ওলামায়ে-কেরাম বলে গেছেন, তারা বলেছেন, তোমর'া যে কোনো ধরনের গোনাহের অনুষ্ঠানকে বর্জন করো এবং ওই সমস্ত মানুষদের অনুষ্ঠানকে বর্জন করো যাদের কর্ম প'দ্ধতি সন্দে'হযুক্ত, এবং যারা নারীদেরকে রাস্তায় বের করে এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সের অনুমতি দেয়, যারা নারীদেরকে উল''ঙ্গপনার দিকে আহ্বান করে, যারা নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার দিকে উৎসাহিত করে বর্তমান সমাজে ফাসাদ শুরু করেছে, তাদেরকে বয়কট করো।
খুতবায় তিনি আরো বলেন, যারা নে'শাযুক্ত পানীয়কে বৈধতা দান করে তাদেরকে বয়কট করো। পরিপূর্ণভাবে গান-বাজনা এবং কমেডি, কৌতুক ও সিনেমা'র অনুষ্ঠানকে বয়কট করো৷ যদিও যারা এই সিনেমা ও কমেডি চালু করেছে তারা এটাকে নিছক বিনোদন মনে করে অথচ, এটা কেবল বিনোদন নয় বরং এই সিনেমা'র অনুমোদন দ্বারা একমাত্র উদ্দেশ্য হলো- পশ্চিমা চিন্তা-চেতনাকে লালন করা এবং সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পশ্চিমা আদর্শ ও নীতিকে ঢুকিয়ে দেয়া। যে নাচ গানের এবং কমেডি নাটক সিনেমা'র অনুমোদন একেবারে ইসলামে নেই। ইসলামী নীতিতে এই কাজ হারাম, ইসলাম এর অনুমোদন দেয় না।
শায়খ সালেহ আল-তালিব খুতবায় বলেন, তারা অ’শ্লী'লতাকে বিনোদন পোশাক পরিয়ে এবং বেহায়াপনাকে মুক্তচিন্তা-চেতনার চাদর পরিয়ে উপস্থাপন করছে। অথচ এই বিনোদন দ্বারা কেবল এটাই উদ্দেশ্য, যেন তারা যুবক-যুবতীদেরকে নাচ-গান, বেহায়াপনা ও অ’শ্লী'লতা ও ইখতিলাত অর্থাৎ অবাধ মেলামেশার দিকে মাজনুন তথা পাগলপারা বানিয়ে দিতে পারে।
হারাম শরিফের সাবেক এ ইমামের মতে- তাদের এই অসৎ উদ্যোগ পবিত্র এই ভূমির জন্য ল'জ্জাজনক বি'ষয় এবং এই পবিত্র ভূমিকে লাঞ্চিত করার শামিল, তাদের এই অসৎ উদ্যোগ ভবি'ষ্যতের জন্য ভয়াবহ সংকেত, এক সময় আসবে যখন এই বেহায়াপনায় ‘কুদওয়াতুন লি-শ্শাবাব’ তথা যুবকদের উত্তম মডেল হিসেবে স্থান পাবে।
তিনি বলেন, হে সীমাহীন চরমপন্থীরা! তোমর'া জনগণের ধন-সম্পদকে অন্যায়ভাবে, অহেতুক পাপ কাজে খরচ করছো, এতে না আছে জনগণের কোনো রকম উপকারের ছিটেফোঁটা, না আছে জনগণের কল্যাণ৷ হে চরমপন্থীরা! যদি তোমর'া জনগণের পয়সাকে পাপকাজে খরচ করা বন্ধ না করো, তাহলে একদিন আসবে যেদিন এই অ’পরাধ ও পাপ তোমা'দের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে এবং তোমা'দের জন্য বড়ই আফসোসের কারণ হবে, ফলে তোমর'া পরাজয় বরণ করবে।
শায়খ তালিব বলেন, হ্যাঁ, অচিরেই তোমা'দের শক্তি এবং আদর্শের পরাজয় হবে৷ তোমা'দেরকে তারাই পরাজিত করবে যারা সর্বদা দ্বীনের ওপর অটল থাকে, তারাই একদিন তোমা'দের বিনোদন নামক বেহায়পানা ও অ’শ্লী'লতাকে ময়লা-আবর্জনার ডাস্টবিনে নি'ক্ষেপ করবে, তাদের নিজেদের উত্তম আদর্শ এবং সঠিক নিয়ত ও ইসলামী আক্বীদার মাধ্যমে। অচিরেই তোমা'দের অ’শ্লী'লতার মঞ্চকে কুরআনের ধারকবাহকগণ আদর্শের যু'দ্ধের মাধ্যমে পরাজিত করবে। অচিরেই তোমা'দেরকে পরাজিত করবে ওই আল্লাহুআকবার ধ্বনির আওয়াজ যা দিবারাত্রি পাঁচ বার কানে ভেসে আসে এবং আমা'দের অন্তরে এই পবিত্র আওয়াজের বাতাস প্রবাহিত হয় ও চক্ষু শীতল করে।
সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর, জিও নিউজ ও অন্যান্য